সঞ্চারী ঘোষ
আজ অনেককাল বাদে সকাল আট টায় উঠলাম, তাই বেশ ফুরফুরে মেজাজে চা নিয়ে বিছানায় বসে সবে পেপার পড়া শুরু করেছি ,মা ঘরে ঢুকল!
“বাবু আপেল খাবি?”
এত সকালে আপেল? ইসস্! একবাক্যেই না করে দিলাম আমি,আপেল জিনিসটা কোনোকালেই আমার ঠিক সহ্য হয় না!
মা ও শুনে একটুও জোর না করেই চলে গেল! এহেন ব্যবহারে খুশি যেমন হলাম,একটু অবাক ও তেমন হলাম, কিন্তু আমি তখন পেপার পড়ায় মগ্ন,তাই তাতেই আবার মনোনিবেশ করলাম।
কিছুক্ষণ পরই মা আবার হাসিমুখে ঘরে ফিরে এলো, সাথে একজন মহিলা,তবে ঠিক দেখা যাচ্ছেনা তাকে! বললাম,মা তোমার সাথে উনি কে?
ওই মহিলা তখন এগিয়ে এলেন,মুখে স্মিত হাসি,হাতে একটি বাটি,তাতে আপেল কেটে রাখা!
ওনার মুখের দিকে তাকিয়ে অসম্ভব চেনা লাগলো,কোথায় যেন দেখেছি?
হঠাৎ করে মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেল,আরে ইনি তো কমলা হ্যারিস! মা এনাকে কোথায় পেল? এ কী করে সম্ভব?
কিছুই বুঝতে না পেরে হা করে তাকিয়ে থাকলাম। দেখলাম উনি আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন, বাটি টা আমার হাতে দিয়ে বললেন এবার আপেল টা খাবে তো?
আমি আমতা আমতা করলাম, হ্যাঁ ,মানে আপনি এত দূর থেকে আমাকে আপেল খাওয়ানোর জন্য এসেছেন? আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছেনা,আপনি বসুন প্লিজ!
সাথে সাথেই দেখি,পাশে রাখা ফোন ভাইব্রেট করছে, ফোনটা তুলতেই ওপাশ থেকে Pritha র গলা,ভাই তোর বাড়িতে নাকি কমলা হ্যারিস এসেছেন? আমি আমার কাকুকে নিয়ে যাচ্ছি এক্ষুণি!
আমি কিছু বলবো,তার আগেই ফোনটা কেটে দিল।
ফোন রেখে আমি আবার ওনার দিকে তাকালাম,দেখলাম উনি আমার পাশেই বসে আছেন। ইতিমধ্যে বাবুই এসে বসেছে ঘরে,উনি সেই স্মিত হাসি বজায় রেখেই বাবুইয়ের সাথে গল্প করছেন। বাবুইয়ের পাশেই আরো একজন বয়স্কা ভদ্রমহিলা বসে রয়েছেন।ওনাকেও বেশ চেনা লাগলো, তাই কিছুটা ইতস্তত করেই আমি ওনার দিকে এগিয়ে গেলাম। মিষ্টি হেসে উনি বললেন, আগামীকাল আমি তোমার ইংলিশ পরীক্ষা নেবো,মনে আছে তো?
কিন্তু আমার তো কোনো পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিলনা! আবার ওনার দিকে ফিরে তাকাতেই মনে পড়ল,অবাক কাণ্ড, ইনি তো সুধা মূর্তি! এখানে কি করছেন?
উনি আমার মুখ দেখে বোধ হয় কিছু বুঝলেন,নিজেই বললেন, কমলার সাথে দেখা করতে এলাম, কিছু কথা ছিল বুঝলে!
আমি অবাক হয়ে শুধু ঘাড় নাড়লাম।
হঠাৎ শুনি,ঘরের দরজার সামনে শোরগোল।দেখলাম,পৃথা এসেছে। একপাশে ওর ছোট বোন,আর এক পাশে স্বয়ং শশী থারুর।
এবার আমার মূর্ছা যাবার পালা। পৃথা কে একঝটকায় টেনে ঘরের কোণায় আনলাম,
ভাই এসব কি হচ্ছে? তোর কাকু শশী থারুর? আমাকে আগে বলিসনি তো?
ও অবাক হয়ে বললো,সেকিরে!এটা তো সবাই জানে ,বলার কি আছে? তারপর শশী থারুরের হাত ধরে লাফাতে লাফাতে কমলা হ্যারিসের পাশে গিয়ে বসলো।
হতবাক আমি ঘরের সেই কোণটি তেই চুপ করে বসে পড়লাম। একে একে দেখলাম চেনা,অচেনা বহু মানুষই এলেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য, অনুপম খের ও তার ভাই, বিছানার সামনে চেয়ারে বসলেন দুজনে। বিছানা ঘিরে ভিড় করে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাকি সবাই, বিছানায় আর বসার জায়গা নেই।
সবার শেষে ঘরে প্রবেশ করলো ফ্রেন্ডস টিভি সিরিজখ্যাত রস, হাতে একটি বিরিয়ানির প্যাকেট। চিরাচরিত হাসি নিয়ে কমলা হ্যারিসের সামনে গিয়ে সে প্যাকেটটি খুলল,সাথে তার মুখের সেই বিখ্যাত এক্সপ্রেশন।
বুঝলাম, আমিই শুধু এক কোণায় চুপচাপ বসে সব দেখছি, বাকি সবাই উত্তেজিত স্বরে একে অপরের সঙ্গে গল্পে মত্ত! নানান চরিত্র,তাদের নানানরকম অঙ্গভঙ্গি আর কার্যকলাপ! যেন সকলেই আনন্দমেলা পূজা বার্ষিকীতে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পের প্রথম পাতার ছবি থেকে উঠে এসেছে আর আমি নিতান্তই এক নির্বাক,হতচকিত পাঠক।
কিন্তু শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্পের মতো রঙিন চরিত্র রা থাকবে,এদিকে গন্ডগোল বাঁধবে না, তা তো হয়না! এখানেও হলো ঠিক তাই।
হই হট্টগোল,তুমুল শোরগোল চলছিল সব ঠিকঠাকই, হঠাৎই ঘটলো যবনিকা পতন। সবাইকে আশ্চর্য করে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন প্রবীণ অভিনেতা অনুপম খের,পকেট থেকে বের করলেন রিভলভার। এরপর আরো আশ্চর্য হবার পালা, রিভলভার তাক করলেন মিস্টার থারুরের দিকে!
আমি ভয়ার্ত চোখে চারিপাশে তাকালাম,দেখি সবাই আমার মতই ঘটনার আকস্মিকতায় থ হয়ে বসে! কিছু বলতে যাবো,তার আগেই কানে এলো বন্দুকের বিকট আওয়াজ ! গুলি কোথায় লাগলো ঠিক বুঝলাম না,চারদিকে পরিত্রাহী রব উঠলো। দেখলাম সব্বাই আমার সামনে দিয়েই পড়িমড়ি করে ছুটে পালাচ্ছে, কেবল অনুপম খের একা দাঁড়িয়ে রয়েছেন সামনে ,তার চোখে মুখে বিহ্বলতা! বললেন, এখনও দাঁড়িয়ে কেন? প্রাণের ভয় নেই বুঝি?
আমি সম্বিৎ ফিরে পেলাম। এক ছুটে নিজের ঘরের বাইরে এসে পাশের ঘরে একটিবার উঁকি মারতেই দেখি মা নিশ্চিন্তে বসে রয়েছে । মা কে টেনে বাইরে এনে চিৎকার করে বললাম, ঘরে গোলাগুলি চলছে,শিগগির বাইরে চলো!
সেকী বলছিস? মা আর্তনাদ করে কিছুটা দৌড়ে গিয়েই কি ভেবে যেন সদর দরজার সামনে থমকে দাঁড়ালো, আমার দিকে ফিরে হঠাৎ চোখ রাঙিয়ে বললো,
কিন্তু তিতির,আপেলটা কি তুই শেষ করলি?
আমার ঘুম ভেঙে গেল।
Leave a Reply